বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :-
করোনার কারনে দীর্ঘ দেড় বছর পর স্কুল খোলার কয়েক দিনের মধ্যে গোপালগঞ্জে দুই স্কুল ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছে বাড়ী বা অন্য কোন স্থান থেকে ওই শিক্ষার্থী করোনায় আত্রাস্ত হয়েছে। এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন ওই দুই স্কুলের শ্রেনী কক্ষ দু’টি তালা বন্ধ করে দিয়েছে।
করোনা আক্রান্ত মোনালীসা ইসলাম গোপালগঞ্জ পৌরসভা শিশুবন এলাকার মাসুদ শেখের মেয়ে এবং কোটালীপাড়া উপজেলার ৪ নং ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী তিনা খানম।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২ নং বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়। ওই দিন অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে পাঠদানে অংশ নিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোনলীসা ইসলাম বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহন শুরু করে। ১৪ সেপ্টেম্বর মোনালীসার মাথা ব্যাথা ও জ্বর শুরু হয়। এরপর থেকে সে আর বিদ্যালয়ে আসেনি। পরে ২১ সেপ্টেম্বর করোনার পরীক্ষার নমুনা দেয়া হয় এবং ২২ সেপ্টেম্বর মোনালীসা ইসলামে করোনা পজেটিভ আসে
আক্রান্ত মোনালীসার মা মিতু খানম বলেন, এতো দিন আমার মেয়ে বাড়িতে ছিলো এবং সুস্থ ছিলো। গত ১২ সেপ্টেম্বর মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাই ১৪ সেপ্টেম্বর সে মাথা ব্যাথা হালকা জ্বর অনুভব করে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেই। ২১ তারিখে তার জ্বর না কমায় নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরিক্ষা করতে দেই স্বাস্থ্য বিভাগে। পরের দিন ২২ সেপ্টেম্বর তার করোনা পরিক্ষার ফলাফল পজেটিভ আসে। এর পর থেকে তাকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শষ্য বিশিষ্ট জেলারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় । তাকে দুই দিন অক্সিজেন দেওয়ার পর এখন কিছুটা শারীরিক উন্নতি হয়েছে। আমাদের পরিবারে অপর কোন সদ্য করোনা আক্রান্ত হয়নি ।
বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, মোনালীসা ইসলাম সর্বশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় ক্লাস করে। সেই দিন তার মধ্যে করোনার কোন উপসর্গ জ্বর ও মাথা ব্যথা লক্ষ করা যায়। এরপর তার নমুনা পরিক্ষা করলে করোনা পজেটিভ আসে। আমরা সার্বক্ষণিক তার পরিবারে সাথে যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া সে যে কক্ষে ক্লাস করেছিলো সেই কক্ষটি স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকী শ্রেনীর ক্লাসগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। তবে অন্য কোন শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনার কোন উপসর্গ দেখা যায়নি। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত তাপমাত্র মেপে শ্রেনী কক্ষে প্রবেশ করাচ্ছি।
অপরদিকে, কোটালীপাড়া উপজেলার ৪ নং ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী তিনা খানম অন্যান্য সহপাঠিদের সাথে স্কুরে ক্লাশ করে। পরে ওই ছাত্রীর ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হলে ১৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসে। এরপর থেকে তাকে নিজ বাড়িতে মায়ের সাথে করেনটাইনে রাখা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে তৃতীয় শ্রেনী ১৪ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকী শ্রেনীর ক্লাসগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে। এছাড়া পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেনীর মোট ৪জন শিক্ষার্থী ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুবাইয়া ইয়াসমিন বলেন, বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে আমরা ওই বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় তলায় ২০১ নম্বার কক্ষ বন্ধ করে দেই।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, আক্রান্ত ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে সুস্থ রয়েছে। আমরা তাকে করোনার চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে সে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন আছে।