চরফ্যাশন প্রতিনিধি :-
চরফ্যাশনের জাহানপুর ১৯৯ নং পশ্চিম ওমরাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।এমন অভিযোগে এলাকাবাসীর পক্ষে ইউপি মেম্বার মোঃ রাসেল বাদী হয়ে ২৯/৮/২১ তারিখে বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তা আবার সদয় অবগতির জন্য ভোলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাছে অনুলিপি প্রেরণ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,১৯৮৫ সালে বেসরকারি ভাবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও আজো অনিয়মের মধ্যে রয়েছে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হলেও থেমে থাকেনি প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমান ও ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি হাজি জলিল অনিয়ম ও দুর্নীতির কার্যক্রম। অনিয়ম ও দুর্নীতি কে হালাল করতে প্রধান শিক্ষকের আপন ৩ ভাইকে পালাবদল করে একের পর এক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করেন।
২০১৩ সালে বিদ্যালয় সরকারি করণ করার ঘোষণা হয়। প্রজ্ঞাপন জারি হয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হতে হলে তার যোগ্যতা লাগবে ন্যূনতম ডিগ্রী পাস। প্রজ্ঞাপনকে পুজি করে প্রধান শিক্ষক তার মনগড়া সেই আগের মতোই তার আপন ভাইয়ের মেয়ে ওমরাবাজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা (বিএসসি) সালমা জাহান কে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করেন। গড়ে তোলে অনিয়ম ও দুর্নীতির পাহাড়।
অনিয়মগুলো হচ্ছে প্রতিবছরের সিলিপের টাকা আত্মসাত, ছাত্রছাত্রীদের বরাদ্দকৃত বিস্কুট লোপাট, বিদ্যালয়ের নামে অধিগ্রহনকৃত জমি বেদখল,সহ নানা অনিয়ম।
এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এলাকাবাসির পক্ষে স্থানিয় ইউপি সদস্য মোঃ রাছেল বাদি হয়ে এমন অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করেন বিদ্যালয়ের নামে ৫০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি হয়। রেস্ট্রি হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ওই জমি স্কুলের দখলে আসে নি। দলিলে উল্লেখ করা আছে খতিয়ানের ৪টি মাত্র দাগ। এসব দাগভূক্ত জমিতে স্কুলের ভবন নির্মাণ না করে প্রধান শিক্ষক ও তার আপন ভাই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজশে নিজের পুকুর পাড়ে ভবনটি নির্মাণ করেন। যেখানে রয়েছে সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতি। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কুলে নেই কোন শিক্ষার মনোরম পরিবেশ। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় দূর-দূরান্ত থেকে আশা কোমলমতি শিশুরা মাঝে মধ্যে হোঁচট খেয়ে পুকুরের পড়ে ইতোমধ্যে কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।যার ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুল যাওয়া বাদ দিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করেন। প্রধান শিক্ষকের আপন ভাই ভাতিজি নিজস্ব লোক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সদস্য হওয়ার কারণে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের মনগড়া ভাবে দলিলে উল্লেখিত জমিতে ভবনটি নির্মাণ না করে নিজ বাড়ির পুকুর পাড়ে ভবন নির্মাণ করে ইচ্ছামত জমি দখল করে লুটেপুটে খাচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১শ জন। অনিয়মের মাধ্যমে ২শ ছাত্র-ছাত্রি কাগজ কলমে সরকারের চোখ ফাকি দিয়ে সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে বিস্কুট বরাদ্দ করে নেন। বরাদ্দকৃত বিস্কুট বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে খামারের মুরগির জন্য প্রস্তুত করে আসছে।
সংবাদ পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমান জানান, শিক্ষা অফিসের স্যার এসে তদন্ত করেছে।স্কুলের সকল ফাইল কর্তৃপক্ষ সিজ করে নিয়ে গেছে। তদন্তানুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা যা হবার হবে। একটি কুচক্রী মহল আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সালমা জাহানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক আমার ছোটবেলার শিক্ষক ও আমার আপন চাচা। তাই একটু ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। অনেক বিষয় আছে আমার বলার সম্ভব হয়না। জমির দলিল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, ৪ টি দাগে জমির দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে সত্য, ভবনটি হয়েছে অন্য জায়গায়। তা আবার নামজারীও হয়নি।
জাহানপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম হাওলাদার বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে গেছে। সে সময় কর্তৃপক্ষ আমাকে এই স্কুলের জমি টি সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করার জন্য দেড় মাসের সময় বেঁধে দেন।
চরফ্যাসন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহিদুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।