বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :-
একনেকে অনুমোদন হয়েছে ১৫ মাস আগে আর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ হয়েছে ১১ মাস আগে। এরপর দরপত্র প্রক্রিয়া ৮ মাস আগে সম্পন্ন হলেও সম্ভব হয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ। যে কারনে শুরু করা সম্ভব হয়নি গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ। প্রায় দশ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কটির বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দ ও গর্ত তৈরী হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে দূর্ভাগ চরমে পৌঁছেছে সাধারণ মানুষের।
তবে সড়ক কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগে চলছে দরপত্র যাচাই বাছাই। যে কারনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে বিলম্ব হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নয়ন করতে ২০২০ সালের জুন মাসে ৬টি প্যকেজের মাধ্যমে ৬১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে একনেকে পাশ হয়। এতে মূল সড়কের জন্য ৪৯৬ কোটি টাকা ও জমি অধিগ্রহন ও অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ১১৬ কোটি টাকা। এরপর ওই বছরের নভেম্বরে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ এবং চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী দরপত্র আহবান করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সড়কে দুই পাশ থেকে গাছ সড়িয়ে নিয়েছে বন বিভাগ।
রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ওই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, টেকেরহাট থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে শহর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। আবার গ্রামের মানুষও জেলা শহরের আসা যাওয়া জন্য ব্যবহার করে থাকে।
কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছরেও সড়কটিতে সংস্কার না করায় বিভিন্ন স্থানে সৃস্টি হয়েছে খানা খন্দ ও গর্তের। এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলরত সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। গোপালগঞ্জ থেকে টেকেরহাট যেতে যেখানে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট এখন সেখানে সময় লাগছে প্রায় দেড় ঘন্টা। এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহনের বিভিন্ন অংশ ভাঙ্গার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
এছাড়া সড়কটির পাশ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে রাইস মিল ও পাটের মিল। কিন্তু সড়কটির বেহাল অবস্থা থাকায় যাত্রী পরিবহন ও মালামাল আনা নেয়া করতে ভোগান্তিতে পড়ছে ব্যবসায়ীদের।
এদিকে, কাজ শুরু না হলেও পাথর ও পিচ দিয়ে রিপেয়ারিং করে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার চেষ্ঠা চলিয়ে যাচ্ছে সড়ক বিভাগ। এতে কয়েকদিন চলাচলের উপযোগী হলে পরর্বতীতে আবারো এসব পাথর ও পিচ উঠে গিয়ে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে।
ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী জলিরপাড় গ্রামের নিতিশ তালুকদার ও প্রবীর শীল বলেন, দেড় থেকে দুই বচল ধরে শুনছি সড়কটি সম্প্রসারন করা হবে। সম্প্রসারন না হলেও দীর্ঘ দিন সড়কটি মেরামত না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমাদের দাবী সড়কটি দ্রুত সম্প্রসারণ বা মেরামত করে এলাকাবাসীর চলাচলের সুবিধা করে দেয়া হোক।
সবজি বিক্রেতা সদানন্দ বালা ও দোকানদার নির্মল মন্ডল বলেন, সড়কটির বেহল অবস্থায় থাকায় কোন গাড়ী চলতে চায় না। এতে আমরা আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য ও দোকানের মাল পত্র আনতে ও নিতে পারি না। এতে আমাদের ব্যবসায়ীক ক্ষতি হচ্ছে।
ভ্যান চালক মিন্টু বৈরাগী বলেন, এই সড়কটিতে প্রায় সাত আট বছর হলো কোন কাজ করে না। দীর্ঘদিন কাজ না করায় রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত তৈরী হয়েছে। আমরা যারা ভ্যান চালাই তাদের খুব কষ্ট হয়। সঙ্গে যাত্রীদেরও কষ্ট হয়। বড় গাড়ীকে সাইড দিতে গিয়ে ভ্যান উল্টে পড়ে।
ট্রাক চালক খোকন ফলিয়া ও ইদ্রিস আলী মোল্যা বলেন, সড়কটি এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। পেটের টানে তারপরেও বাধ্য হয়ে এ সড়ক দিয়ে গাড়ী চালাতে হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ মিনিটের রাস্তা কিন্তু সময় লাগে দেড় থেকে পৌনে দুই ঘন্টা।
গঙ্গারামপুর গ্রামের পাট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের অধিকাংশ জায়গায় খানা খন্দ তৈরী হয়েছে। রাস্তার উপরের অংশ প্রায় উঠে গেছে। গুদামে মালামাল আনতে খুব সমস্যা পোহাতে হয়। এতে খরচও বেশী লাগে। তাই সড়কটি সংস্কারের দাবী জানাচ্ছি।
গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: জাহিদ হোসেন বলেন, গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়ক গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক। এ সড়কটি মাদারীপুরের টেকেরহাট থেকে গোপালগঞ্জ শহর হয়ে ঘোনাপাড়া দিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সাথে যোগ হয়েছে। পরিচালক নিয়োগের পর দরপত্র পক্রিয়া সম্পন্ন হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না পাওয়ায় বড় ধরনের উন্নয়ন কাজ শুরু করা যায়নি। তারপরেও সড়কটি চলাচলে উপযোগী করে রাখতে রিপেয়ারিং করা হচ্ছে। এটি ব্যস্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক হওয়ায় উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। এ সড়কটি শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়ায় শহরের রাস্তা সম্প্রসারন করা যাবে সেই সাথে শোভাবর্ধনের কাজও করা যাবে।
সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং সড়ক ও জনপথ গোপালগঞ্জ সার্কেলের তত্ত্ব¡াবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাশ বলেন, আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দরপত্র গ্রহন করে ঠিকাদার মূল্যায়নের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার নিয়োগ দিলেই সড়কটি উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঠিকাদার নিয়োগের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে সড়কের কাজ শুরু করা হবে।