মোঃ আসাদুল ইসলাম,গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি :-
ফেসবুক খুললেই প্রতিনিয়ত দেখা যায় সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। এরকম বিজ্ঞাপনের একটি হলো কথিত- সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্ত, জাতীয় দৈনিক মুক্ত আওয়াজ পত্রিকা’র সাংবাদিক নিয়োগের বিজ্ঞাপন।
কখনো Mukto awaz নামের আইডি থেকে, আবার কখনো দৈনিক মুক্ত আওয়াজ পত্রিকা নামের ফেসবুক পেইজ আইডি থেকে বা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আইডি থেকে সাংবাদিক নিয়োগের বিজ্ঞাপন বেশি দেখা দিচ্ছে।
প্রশ্ন হলো আসলেই কি সাংবাদিক নিয়োগ চলছে? উওর না! চলছে প্রতারণা। এই প্রতারণার মাষ্টারমাইন্ড কথিত- সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্ত দৈনিক মুক্ত আওয়াজ পত্রিকা’র প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক ফাহিম ফয়সাল।
জানা যায়, এরকম ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। কেউ প্রতিনিধি হতে চেয়ে কল করলেই মিষ্টি কন্ঠে প্রথমেই ইনকামের পথ দেখায়। শিখিয়ে দেয় কিভাবে ইনকাম করতে হবে। বলে দেয় প্রতিটি থানায় এসআই এর সাথে এক কাপ চা খেয়ে আসবেন, নিউজ দিবে আপনাকে প্রতিনিয়ত থানা থেকে এসআই। তারপরে বলে প্রতিনিধিদের জন্য রয়েছে দৈনিক মুক্ত আওয়াজ এর সাথে দৈনিক আমাদের বাংলাদেশ পত্রিকারও একটি আইডি কার্ড, ফিতা, স্টিকার, টিশার্ট ইত্যাদি। সব মিলিয়ে এক জোড়া করে পাবেন প্রতিনিধিরা। এর দাম প্রায় ২,৬০০ টাকা। তবে প্রতিনিধিদের দিতে হবে ১,৫০০ টাকা।
তার এই মিষ্টি কথায় সারাদেশের শিক্ষিত বেকার যুবকরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংবাদ কর্মীরাও প্রতারিত হয়েছে। কারও থেকে নিয়েছে ১০০০, কারও থেকে ১৫০০, ১২০০, ১০২০, ২০০০, ৩০০০ করে এমন ব্যাপক টাকা। তবে জুটেনি কারও কপালে উল্লেখিত কোনো কিছুই। পরবর্তীতে কল দিলে বলে আপনাকে চিনিনা। বেশি কল দিলে নাম্বারটি করে রাখতো ব্লক।

এবিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, বেকার থাকায় ফাহিম ফয়সালের কথায় রাজি হয়ে টাকা দিয়েছি। ভাবছিলাম সাংবাদিকতার মতো একটি মহৎ পেশায় থেকে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো এবং টাকার সমস্যাটাও সমাধান হবে। কেউ বলে করোনাকালীন সময়ে কষ্ট করে টাকা দিয়েছি, যাতে বেকার থাকতে না হয়। তবে তখন বুঝতে পারিনি সে এতবড় প্রতারক। আমরা এর বিচার চাই। প্রশাসনের মাধ্যমে ফাহিম ফয়সালের শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে, ময়মনসিংহ বিভাগীয় পত্রিকা, ময়মনসিংহ প্রতিদিন ও দৈনিক আলোকিত সকালের নেত্রকোনা কলমাকান্দা উপজেলা প্রতিনিধি হৃদয় আহমেদ জানান, আমার কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকৌশল ভাবে ১০০০ টাকা নিয়েছে। তবে পরবর্তীতে ফোন দিলে কার্ড দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এর পরেও এ পর্যন্ত কোনো কার্ড পাইনি। আমার কাছে সব প্রমান রয়েছে এই এম ফাহিম ফয়সাল এর বিরুদ্ধে।
আরোও জানা যায়, দৈনিক তৃতীয়মাত্রার পলাশবাড়ী প্রতিনিধি ও পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক- সাংবাদিক নুর মোহাব্বত সরকারের ৬৫০ টাকা, ভোলার- প্রতিনিধি হতে চাওয়া মোঃ শাহিনের ১,৪৫০ টাকা, যশোরের প্রতিনিধি হতে চাওয়া মো.আলী রেজা রাজু’র, ১,০২০ টাকা, নারায়ণগঞ্জের সুমন আহমেদের ১,০২০ টাকা, ঢাকার- সাংবাদিক জুবায়ের হোসেন’র ১,৫৩০ টাকা, সিরাজগঞ্জের শাহীন রেজার ৬০০ টাকা, মোঃ মাইনুদ্দিনের ৬৫০ টাকা, মোঃ ইসমাইল হোসেন সাকিলের ১,০২৫ টাকা, আলমগীর হোসেনের ৭০০ টাকা সহ একাধিক ব্যাক্তির অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে, ফাহিম ফয়সাল’কে কল করে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন এগুলো তিনি জানেন না। তাদের নিয়োগ নাকি বন্ধ। এবং তার পত্রিকাটি অনলাইন এবং ম্যাগাজিন বের করেন, প্রতিমাসে নাকি একবার প্রিন্ট করেন। এবং কার্ড, ফিতা, স্টিকার, টিশার্ট ইত্যাদি সহ সবকিছু ফ্রী দেন।
অন্যদিকে ফাহিম ফয়সালের কথিত- সরকারি মিডিয়া তালিকাভুক্ত দৈনিক মুক্ত আওয়াজ পত্রিকায় নিয়োগের বিষয়ের কথপোকথনের কিছু ভয়েস রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌছাইছে। যাতে টাকা নেওয়ার বিষয়ে এবং নিয়োগের বিষয়ে কথা বলার সময়ে ঐ ব্যাক্তিকে টাকা ইনকাম সহ বিভিন্ন লালসা দেখিয়েছেন।
এ সব প্রতারনার কারনে দেশের সাধারন সংবাদ কর্মিরা পত্রিকা এবং সাংবাদিকতার প্রতি হারিয়ে ফেলছে আস্থা ও বিশ্বাস তাই এ ব্যাপারে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে শিগ্রই সকল প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা গ্রহন করার জন্য দেশের সর্বস্তরের সাংবাদিক মহলের দাবি।