মোঃখাইরুল ইসলাম মুন্না , বেতাগী বরগুনা :–
জেলার বেতাগীতে আ: জলিল নামে জনৈক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিকাহ রেজিষ্টার সেজে ভূয়া নিকাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রি করে মানুষকে প্রতারিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়েও সে বছরের পর বছর ধরে নিজের বাসায় সাইনবোর্ড দিয়ে অফিস খুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এ অবৈধ কাজ চালিয়ে আসছে।
উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের পশ্চিম কাউনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত- কেরামত আলীর ছেলে আ: জলিলের এ অনৈতিক কাজের প্রতিবাদে ঐ ইউনিয়নের প্রকৃত নিকাহ রেজিষ্টার মাওলানা মো: মিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার (১৭ আগষ্ট) দুপুরে স্থানীয় আকণ ফুড চাইনীজ রেস্তরায় সংবাদ সম্মেলন করেন।
এসময় উপজেলা নিকাহ রেজিষ্টার সমিতির সভাপতি সাইদুল ইসলাম সোহরাব, সাধারণ সম্পাদক মো: হেমায়েত উদ্দিন ও অর্থ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি ইতোমধ্যে জেলা রেজিষ্টার, উপজেলা পরিষদ ও থানায় এবং সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৪ মে বরগুনা পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, আ: জলিল একজন প্রতারক, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালজালিয়াতির মাধ্যমে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করা তার নেশা ও পেশা।
উপজেলা সাব-রেজিষ্টারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্টার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রেক্ষিতে তিনিসহ ঐ পদে আরও অনেকে আবেদন করেন। একই সালের ২২ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সাব রেজিষ্টারের উপস্থিতে পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারীদের মধ্যে থেকে মিরাজুল ইসলামকে নিকাহ রেজিষ্টার পদে ১ নং প্যানেলভুক্ত করেন। পরবর্তীতে তা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রেরণ করে।
একই বছরের ১৪ নভেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে সিনিয়র সহকারি সচিব বুলবুল আহম্মেদ, বিচার শাখা-৭ তাকে নিকাহ রেজিষ্টারের লাইসেন্স প্রদান করেন (বিচার-৭/২-এন-৮৯/৭৫-৩৮৯)। ১৭ নভেম্বর বরগুনা জেলা রেজিষ্টারের কার্যালয় যোগদান করতে গেলে জানতে পারেন আ: জলিল বেতাগী সাবরেজিষ্টারের স্বাক্ষর, সীল ও আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া নিয়োগ, যোগদানপত্র ও ব্যানার ফেষ্টুন নিজে তৈরি করে নিজে-নিজেই কাজী হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় নিকাহ ও তালাক রেজিষ্টারের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
পশ্চিম কাউনিয়া গ্রামের আব্দুর রশীদ মোল্লার মেয়ে শারমিন আক্তারের সাথে একই উপজেলার বেতমোর গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে মো: হাবিবুর রহমানের দেড় লাখ টাকা দেনমোহরেসহ একাধিক ব্যক্তির বিবাহ কাজ সম্পন্ন করেন ভ’য়া কাজী আ: জলিল। পরবর্তীতে দেখা যায় বিবাহটি রেজিষ্ট্রি হয়নি এবং কোন সনদ জলিল দিতে পারেনি। এভাবে বছরের পর বছর ধরে ভূয়া কাজী সেজে নিকাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রি করে আসায় স্থানীয় সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে।
আ: জলিল নিজ বাড়ির সামনে সাইনবোর্ড টানিয়ে অফিস খুলে এবং নিকাহ রেজিষ্টারের বালাম বই নিজে তৈরি করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিকাহ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিও সরেজমিনে আ: জলিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনই অভিযোগ করেন। এতে কাজী মিরাজুল ইসলাম স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সামাজিকভাবে বাধাঁ দান ও সংশ্লিস্টদের কাছে অভিযোগ করায় আ: জলিল ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গুম করে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। কাজী মিরাজুল ইসলাম বুড়ামজুমদার বাসীর পক্ষ থেকে এ বিষয় তদন্ত পূর্বক আ: জলিলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলাসহ আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেন।
নিকাহ রেজিষ্টার হিসাবে পরিচয়দানকারী আব্দুল জলিল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কি ভাবে অবৈধ জানিনা। তবে সংশ্লিস্ট বিভাগ থেকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে বালাম বইসহ অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে এসে নিকাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রি করে আসছি। তাই জাল-জালিয়াতির কোন প্রশ্নই আসে না। বরং যিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তিনি অবৈধ বলে আমি মনে করি।’
বেতাগী উপজেলা সাব রেজিষ্টার মো: নূর আলম সিকদার জানান, আ: জলিলকে কর্তৃপক্ষ কোন নিয়োগ দেয়নি। সে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে কাজীর কার্যক্রম চালাচ্ছে। এমনকি আমার স্বাক্ষর জাল করে আমি ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর এ উপজেলায় যোগদানের আগেই একই বছরের ১৩ মার্চ তারিখ উল্লেখ করে সে সম্পূর্ণ ভ’য়া যোগদান পত্র তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করছেন। প্রকৃত পক্ষে নিকাহ রেজিষ্টার হিসেবে তার কোন বৈধতা নেই।
এ বিষয় বরগুনা জেলা রেজিষ্টার মো: সিরাজুল করিম বলেন, আইনের আশ্রয় নিয়ে ভূয়া কাজীর এসব অবৈধকাজ বন্ধ করতে হবে।