হায়দার হাওলাদার, বরগুনা ।
ক্যামেরাম্যান পেশা এমনিতেই চ্যালেঞ্জের, তার ওপর আবার মফস্বল ক্যামেরাম্যানর। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় ক্যামেরাম্যানদের। বিভিন্ন প্রকার হুমকি, মামলা-হামলার শিকার হতে হয় যে পেশায় সেটাই হলো ক্যামেরাম্যানদের। তবে ঝুঁকি থাকলেও অত্যন্ত সম্মানজনক পেশা হলেও মফস্বলে বসে যেমন তারা সম্মানটা পায়না ক্যামেরাম্যানরা । ক্যামেরাম্যান সমাজের স্মৃতি তুলে ধরার দর্পণ বা আয়না বলা হয়। জেলা,পর্যায়ে ক্যামেরাম্যানদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। একটা সংবাদের ছবি বা ভিডিও তৈরি করতে হলে ছুটতে হয় একেবারে তৃণমূলে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় মফস্বল ক্যামেরাম্যানদের। দুর্নীতি, অনিয়মের সংবাদের ছবি বা ভিডিও করতে হুমকি বা হামলা হয়। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন বা ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সংবাদ হলেই অবস্থা কিছুটা অন্যরকম হয়। মফস্বল এলাকায় ক্যামেরাম্যান বা সংবাদকর্মী তেমন নিরাপত্তা দেওয়ারও কেউ থাকে না। অনেক সময় মামলা হয়। কিছু কিছু ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটে যেমন- পুলিশ প্রশাসনের মফস্বল ক্যামেরাম্যানদের সাথে খারাপ আচরণ করে ছবি তোলায় বাধাও দেয় । ক্যামেরাম্যানদের জন্য চরম লজ্জাজনক বিষয় এটা। সারাদিন ছুটতে হয় সংবাদের ছবি বা ভিডিও জন্য। উপজেলা পরিষদ, পৌর পরিষদ, থানা, স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটতে হয় মফস্বল সংবাদকর্মীর সাথে ক্যামেরাম্যানও। এভাবেই চলছে মফস্বল ক্যামেরাম্যান।
মফস্বল ক্যামেরাম্যানদের ব্যাপারে, বরগুনা ফটো এন্ড ভিডিও জার্নালিস্ট ফোরামের দপ্তর সম্পাদক, আরিফুল ইসলাম মুরাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
আমি ক্যামেরামান হিসেবে কাজ করি পাঁচ থেকে সাত বছর। সেই অভিজ্ঞতায় আমাদের মফস্বলের যতটা সম্মান পাওয়া দরকার ততটা পাওয়া যায় না। আপনি দেখবেন একটা সংবাদের ৭০% কাজ করে একজন ক্যামেরাম্যানের। সেই৭০% কাজের ৩০% সম্মান পেল ও একজন মফস্বল ক্যামেরাম্যানের মনে কষ্ট পেত না। এমনিতে, একজন মফস্বল ক্যামেরাম্যানের টেলিভিশন বা পত্রিকা পার্মানেন্ট চাকরি নয়, সংবাদকর্মী সহযোগিতা হিসেবে কাজ করে তাদের অধীনস্থ ভাবে নিয়োগ পায়, অফিশিয়াল ভাবে নিয়োগ না পাওয়ায় তাদের আজ চাকরি কাল চাকরি নেই। তবে সংবাদ এর ছবি বা ভিডিওর কাজ করতে যে হুমকি হামলা শিকার হয় সেটা চাকরি না থাকলেও । হামলা হুমকির রেশ থেকে যায় সারা জীবনের জন্য,একজন মফস্বল ক্যামেরাম্যানদের উপর। দেখার কেউ থাকেনা সে সময়।
তবে এভাবে চললে হবে না। ক্যামেরাম্যানদের নিরাপত্তার ও মফস্বলের প্রতিটি ক্যামেরাম্যানদের পার্মানেন্ট চাকরি নিশ্চিত জন্য আইন পাস করা উচিত এবং আইনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আইনের পাশাপাশি ক্যামেরাম্যানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কেননা একতাই বল। একত্রে থাকলে শক্তি পাওয়া যায় এবং প্রতিপক্ষ ভীতচিত্ত অবস্থায় থাকে। এবং মফস্বল ক্যামেরাম্যানদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ সুযোগ করে দেওয়া উচিত । না হলে এক সময়কার মফস্বল ক্যামেরাম্যানদের অস্তিত্ব থাকবে না। তারা অন্য পেশায় বেছে নিতে পারে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যামেরাম্যানদের ওপর হামলা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো বিচার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় ক্যামেরাম্যানদের চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। সরকারের ও টেলিভিশন বা পত্রিকা কর্তৃপক্ষদের উচিত ক্যামেরাম্যানদের নিরাপত্তার ও পার্মানেন্ট ভাবে চাকরি জন্য বিশেষ নজর দেয়া এবং ক্যামেরাম্যান নেতাদের উচিত সরকারের ও টেলিভিশন বা পত্রিকা কর্তৃপক্ষদের কাছে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করা। মফস্বল ক্যামেরাম্যান সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন। আর এমনিতেই তো মফস্বল ক্যামেরাম্যান একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। এটা দেশের সব শ্রেণির জনগণই জানে। এক প্রকার যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয় মফস্বল ক্যামেরাম্যানদের।